
আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবনযাত্রা হয়েছে অনেক সহজ। কিন্তু এই সহজ জীবনযাত্রার কি কোনো গোপন মূল্য দিতে হচ্ছে আমাদের? নতুন একটি গবেষণা বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হয়তো মানুষের বুদ্ধিকে অলস করে তুলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ভালো খবর নয়।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার নিয়ে চিন্তিত এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ছোটদের জন্য এআই কেন বেশি ক্ষতিকর?
‘মিডিয়া এমআইটি’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক নাতালিয়া কোসমিনা উল্লেখ করেছেন যে, এআই সাধারণ মানুষের বুদ্ধি এবং মেধার ক্ষতি করছে, তবে এটি বিশেষভাবে ছোটদের জন্য ক্ষতিকর। শিশুদের মস্তিষ্ক যখন সবে বিকশিত হচ্ছে, তখন এআই-এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বাধা দিতে পারে। নাতালিয়া মনে করেন, শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে এআই পুরোপুরি প্রবেশের আগেই এর ব্যবহার সীমিত করা উচিত।
এমআইটি-এর সমীক্ষা কী বলছে?
গবেষকরা ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৫৪ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান। তাদের তিনটি দলে ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়ে রচনা লিখতে দেওয়া হয়:
- Advertisement -
- প্রথম দল: এআই-এর সাহায্য নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
- দ্বিতীয় দল: গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
- তৃতীয় দল: কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই রচনা লিখতে বলা হয়।
সমীক্ষার সময়, অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ৩২টি অঞ্চলের কার্যকলাপ ইইজি (EEG) এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলাফল ছিল বেশ চমকপ্রদ:
- এআই ব্যবহারকারী দল: এই দলের লেখাগুলো ভালো হলেও, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ছিল সবচেয়ে কম। মস্তিষ্কের যে অংশগুলো যুক্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তির জন্য দায়ী, এআই ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সেগুলোতে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথে এই অংশগুলো আরও কম সক্রিয় হয়ে পড়ে, এমনকি তারা যা লিখছেন, তা নিজেরাও মনে করতে পারছিলেন না এবং শেষদিকে কেবল কপি-পেস্ট করছিলেন।
- কোনো সাহায্য না নেওয়া দল: এই দলের সদস্যরা গবেষণা চলাকালীন তাদের মেধা ও বুদ্ধির প্রয়োগ বাড়িয়েছেন। তাদের ভাবনাচিন্তার গভীরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
- গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারী দল: এই দলের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা ছিল মাঝামাঝি। তাদের লেখার ধরণ এআই ব্যবহারকারীদের কাছাকাছি হলেও, তাদের স্মৃতিশক্তি এবং ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।
উদ্বেগ বাড়ছে নিত্যদিনের জীবনে এআই-এর ব্যবহার
চ্যাটজিপিটি, জেমিনাই এবং অন্যান্য এআই প্রযুক্তি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় এমআইটি-এর গবেষণার ফলাফল নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ। যদি এআই আমাদের মস্তিষ্ককে অলস করে তোলে এবং নিজস্ব চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তবে তা মানব সভ্যতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
এআই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে আমাদের জীবনকে উন্নত করতে পারে। কিন্তু এর সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আপনার কী মনে হয়, এআই কি সত্যিই আমাদের বুদ্ধিকে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে, নাকি এটি কেবল একটি সাময়িক পরিবর্তন?